অন্ধকার আর কতক্ষণই বা থাকে?

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৬ সময়ঃ ১১:১১ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

Setuসকাল হোল আজও। সেদিনও হয়েছিলো।

কাল ৩ টা টিভি চ্যানেলের লাইভ সাক্ষাতকারে গিয়েছি বিকেল থেকে। আমি চাই না যেতে এসবে, ভাল লাগে না। কাল ডাকতেই গেলাম। আসলে কিছু বলতে চেয়েছিলাম। যা বলতে চেয়েছিলাম দুইটা চ্যানেল সে বিষয়ের আশেপাশেই গেলো না। শেষ চ্যানেল এটিএন নিউজের অপু শেষ পর্যন্ত প্রশ্নটা করল, ‘মেলায় অভিজিৎ রয়ের মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে কোন কথা নেই। আপনি এ বিষয়ে কিছু বলেন’।

সকাল থেকে যে কথাগুলো বলার জন্য মনের ভেতর জমিয়েছি তার সব ভুলে গেলাম মুহূর্তেই। এমনকি অভিজিৎ দার নামের পর রায় না দত্ত তাও মনে পরে না। শুধু চোখের সামনে একটা মুখ ভাসে রক্তাক্ত আর একটা ডাক বুকের ভেতর ‘দাদা’।

তবুও শক্ত হয়েছি, বলেছি, ‘”অবিশ্বাস্য লাগছে বিষয়টা যে মেলার ভেতর আজ অভিজিৎ দা নেই। শরীরে নাই সেটা মানতে পারি কিন্তু স্মৃতিতে নেই এটা কিভাবে মানি? কোন প্রকাশক একটা স্মৃতি চারন করে নাই। কোন কর্মসূচি নাই মেলার মাঠে। পুরো বিষয়টিতে আমি বিব্রত, বিরক্ত এবং দুঃখিত। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আমার স্টলের সকল কার্যক্রম বন্ধ রেখে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেছিলাম।’

বুকে পাথর রেখে সামনে এগিয়ে চলতে হয় আমাদের। অনেকে এবার মেলায় আসে নাই। আসবে না আমি জানতাম। মেলা প্রাঙ্গন তাদের কাছে একটা গোরস্থান ছাড়া কিছু না।

আমি রাগে ক্ষোভে না আসার সিদ্ধান্ত নিতে পারি নাই। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম প্রকাশনায় আসার। জায়গা ছেড়ে দেবো না। কিছুতেই না। জায়গা ছেড়ে দিলে জায়গা খালি থাকে না আমি জানি। বিশুদ্ধ বাতাসের জায়গা নষ্ট দুর্গন্ধ বাতাসে ভরে যায়।
সাকার রায়, মুজাহিদের রায় বই আকারে প্রকাশ করেছি। বেঁচে থাকলে সব যুদ্ধাপরাধীর রায় প্রকাশ করবো। জায়গা আমি ছেড়ে দেবো না।

অভি দা নেই। আমার ওয়াশিকুর নেই। বুকের ভেতর দগদগে ঘা। শুকাবে না কোনদিন। এই ঘায়ের ওপরেই হয়তো একদিন নিজের রক্ত প্রবাহিত হবে। মৃত্যু আছে কপালে একইভাবে জানি। দুদিন আগে পরে এই যা। কাজগুলো দ্রুত করে যেতে চাই। তারপর আর কিছু যায় আসে না। মৃত্যুকে সত্য জেনেই জন্মেছি।

ঠিক এক বছর আগে ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে ফোন এসেছিল ওয়াশিকুরের নাম্বার থেকে ‘দিদি, অভি দা আর নেই। বন্যা দির অবস্থা ভাল না’।

মনে আছে সারা রাতে বিছানায় বসতে পারি নাই আর। একের পর এক ফোন করে চলেছি হিল্লোল দা, আনিস, শুভজিতদের কাছে আর চিৎকার করে কাঁদছিলাম।

সেই রাতও এক সময় ভোর হোল। আজও সারারাত বসে দাদার সাথের পুরনো কনভারসেশন পড়তে পড়তেই ভোর হয়ে গেলো।ভোর হবেই। অন্ধকার আর কতখন থাকে!!

আশার কথা লিখে যাই একের পর এক। লিখি বেঁচে থাকার কথা, আনন্দের কথা। স্বপ্ন ছরিয়ে দেয়ার জন্য লিখি।
শুধু এই কারণে একদিন হয়তো আমিও………………

সেদিন আপনারা কাদবেন না প্লিজ। অপেক্ষা করবেন, হাল ছারবেন না, স্বপ্ন দেখবেন। ভোর হয়, হয়েই যায়।
অন্ধকার আর কতক্ষণই বা থাকে?

তামান্নার সেতুর ফেসবুক পাতা থেকে এই লাইনগুলো হুবহু নেয়া হয়েছে।

tamanna

প্রতিক্ষণ/এডি/এফটি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G